চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জানো লেখ

দশম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ হতে

চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জানো লেখ

প্রশ্ন:- চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জানো লেখ।

ভূমিকা :- পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ধলভূম ও উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারদের রক্ষী সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত কর্মচারীরা চুয়াড় নামে পরিচিত। উপজাতি চুয়াড়রা ছিল পেশায় কৃষিজীবী। ঔপনিবেশিক শাসন ও ইজারাদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চুয়াড়রা বিদ্রোহ শুরু করেছিল।

চুয়াড় বিদ্রোহের পর্ব

চুয়াড় বিদ্রোহ দুটি পর্বে সংঘটিত হয়েছিল। –

  • (১) প্রথম পর্ব (১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে এবং
  • (২) দ্বিতীয় পর্ব (১৭৯৮-৯৯ খ্রিষ্টাব্দে)

চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ

উপজাতি চুয়াড় বিদ্রোহের বেশ কিছু কারণ পরিলক্ষিত হয়। যেমন –

(১) নির্যাতন ও শোষণ

ব্রিটিশ সরকার ও তাদের কর্মচারীরা আদিবাসী চুয়াড়দের উপর শোষণ ও নির্যাতন চালাত। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ঘনীভূত হয়ে ওঠে।

(২) জমি থেকে উচ্ছেদ

ঔপনিবেশিক শাসনে ইংরেজরা দরিদ্রদের জমির মালিকানা শর্ত বাতিল করলে তারা জমি থেকে উচ্ছেদ হয়। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

(৩) রাজস্ব বৃদ্ধি

ইজারাদাররা জমিদারদের জমিদারি বাতিল করার পাশাপাশি অতিরিক্ত হারে রাজস্ব আদায় করলে জমিদারেরা অক্ষম হয়ে ওঠে। রাজস্ব না দিতে পারায় তাদের জমিদারিত্ব বাতিল করে।

(৪) পেশা থেকে বিতারন

সরকার তাদের পেশা থেকে বিতাড়িত করলে তারা বিদ্রোহে ফেটে পড়ে।

চুয়াড় বিদ্রোহ নেতৃত্ব

ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথমেই বিদ্রোহ শুরু করলে এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দানে এগিয়ে আসে রায়পুরের জমিদার দুর্জন সিংহ, অচল সিংহ, মেদিনীপুরের রানী শিরোমণি প্রমুখ।

বিদ্রোহের বিস্তার

বিদ্রোহের আগুন শতাধিক গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঁকুড়া, বীরভূম, ধলভূম ও উড়িষ্যার বেশ কিছু অঞ্চলে বিদ্রোহীরা সরকারি প্রশাসন ভেঙ্গে ফেলেছিল।

চুয়াড় বিদ্রোহের অবসান

এই বিদ্রোহকে দমন করার জন্য সরকার চরম দমননীতি নেয় রানী শিরোমণি কে হত্যা করে ও দুর্জন সিংহ সহ অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার করলে বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

উপসংহার :- এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও সরকারের যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাধ্য হয়ে সরকার শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে চুয়াড়দের নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিষ্ণুপুর শহরটি কে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহল নামে পৃথক একটি জেলা গঠন করে।

Leave a Comment